বাড়ী নির্মাণের পূর্বে যেসব বিষয় জানা জরুরি!

 বাড়ী নির্মাণের নিয়মাবলী 

সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, আর্কিটেক্ট এর ছাত্র/ছাত্রী , সদ্য পাস করা ইঞ্জিনিয়ার, অথবা আপনারা যারা বাড়ি বানাতে চান, এই পোস্টটি আপনার জন্য। আমরা ধারাবাহিকভাবে এই বিষয়ে লিখবো, আপনাদের কোনো জানার থাকলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। 

Before making house 🏡 have to know
আপনার স্বপ্নের বাড়িটি 

বাড়ীর মালিকের করণীয়:

১. বাড়ী নির্মাণের প্রাথমিক ধারণা নেয়া।
 ২. নির্মাণ ব্যয় নিরুপন।  
৩. নির্মাণ সামগ্রী সমন্ধে ধারণা 
৪. ভুলত্রুটি ও সাবধানতা সমন্ধে জানা 
৫. নির্মাণ ব্যাবস্থাপনা জ্ঞান অর্জন 
৬. ভালো ঠিকাদার সহ ভালো মিস্ত্রি নিয়োগ 
৭. নির্মাণ কাজ সমূহ একজন দক্ষ সাইট ইঞ্জিনিয়ার দিয়ে সুপারভেশন করানো। 

লেআউট: 

১. কাজ শুরু করার পূর্বে ড্রয়িং অনুযায়ী সুতা দিয়ে কাজের জায়গা নির্ধারণ করাই লেআউট। 
২. ৩:৪:৫ পদ্ধতিতে কর্নার গুলো ঠিক করতে হবে। 
৩. আড়াআড়ি মাপ দিয়ে চেক করে দেখতে হবে, যে একই রকম আছে কিনা। 

Floor plan
Floor Plan

মাটি কাটার কাজ:

মাটি কাটার সময় পাশে বাড়ি বা স্ট্রাকচার থাকলে সবার আগে সেটা মাথায় রাখতে হবে। প্রয়োজনে বল্লি বা শিট পাইল করা লাগতে পারে। 

পাইলিংয়ের কাজ: 

পাইলের কাজের প্রধান বিষয় হলো সেন্টারিং ঠিকভাবে করা। ভুলহলে ঠিক করা খুবই কঠিন। 

গাঁথুনির কাজ: 

১. গাঁথুনির সময় ইটের ফ্রগমার্ক উপরে থাকবে। 

২. একদিনে ৪.৫০ ফিটের বেশি গাঁথুনি করা যাবে না। 

৩. দুই ইটের মাজে ১/২ ইঞ্চি মসলা দিয়ে পরিপূর্ণ করতে হবে। 

৪. ইট গাঁথুনির পূর্বে ভালোভাবে ভিজাতে হবে, যাতে মসলার পানি টেনে না নেয়। 

৫. গাঁথুনির কাজ শেষ হলে পর্যাপ্ত কিউরিং করতে হবে (২০ ঘণ্টা পর থেকে ৭ দিন ) । 

শাটারিং কাজ:

১. শাটারিং এমন ভাবে তৈরী করতে হবে যাতে ঢালাইয়ের ওজনে ভেগে না পড়ে। 
২. কাঠের শাটার ব্যবহার করলে অবশ্যই কাঠের স্ট্রেংথ দেখে নিতে হবে। স্টিলের শাটার ব্যবহার করাই ভালো। 
৩. শাটার এমন ভাবে বানাতে হবে যাতে ঢালাইয়ের পানি চুয়ে না পড়ে। 
৪. কাঠের শাটার ব্যবহার করলে পলিথিন ব্যবহার করতে হবে যাতে পানি চুয়ে না পড়ে। পলিথিন না ব্যবহার করলে প্লেনশীট ব্যবহার করতে হবে। প্লেনশীটের পাশে দিয়া টেপ ব্যবহার করতে হবে, যাতে ঢালাইয়ের পানি বের হতে না পারে। 
৫. ছাদের শাটার এর সাপোর্ট হিসাবে প্রোপস অথবা বাশ ব্যবহার করা যেতে পারে। 
৬. শাটার শেষে ভালো ঢালাইয়ের পূর্বে ব্রেচিং ভালোভালে করতে হবে। যাতে প্রপস বা বাশ পিছলে না যায়। ভালোভাবে সেন্টারিং ও ব্রেসিং করা না হলে ঢালাই যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। 
৭. কমপক্ষে ২১ দিন পর ছাদের  শাটার খুলতে হবে। 

ঢালাই কাজ:

 ১. কলাম ১০ ফিট হলে ২ লিফটে  ঢালাই করতে হবে (৪.৫+৪.৫+১) . 
২. পানি ও সিমেন্টের অনুপাত ঠিক রাখতে হবে.
৩. বালি অবশ্যই দানাদার হবে, বালি ব্যবহারের পূর্বে সেকে  ও ধুয়ে  ব্যবহার করতে হবে। 
৪. পাথর বা খোয়া  ধুয়ে নিতে হবে। 
৫. মিশ্রণ এর অনুপাত ঠিক রাখতে হবে। 
৬. ঢালাইয়ে পরিষ্কার পানি ব্যবহার করতে হবে এবং লবণাক্ত পানি ব্যবহার করা যাবে না। 
৭. ঢালাই এর সময় ভালোভাবে ভাইব্রেটিং করতে হবে, অতিরিক্ত ভাইব্রেটিং করা যাবে না এবং কম ও করা যাবে না, সর্বোপরি  কোথাও যাতে ভয়েড না থাকে। 
৮. ম্যানুয়ালি ঢালাই করার সময় শ্রমিক যাতে অনেক উপর থেকে কংক্রিট নিক্ষেপ না করে সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে । 
৯. ছাদের ক্লিয়ার কভার ঠিক রাখতে হবে। 
১০. ঢালাইয়ের ফিনিশিংয়ের সময় লেবেল খেয়াল রাখতে হবে ইত্যাদি। 

প্লাস্টার কাজ 

১. প্লাস্টারিং এর ক্ষেত্রে আরসিসি সারফেস এর উপর সর্বোচ্চ ৩/৪ ইঞ্চি এবং ব্রিকস সারফেসের উপর সর্বোচ্চ দেড় ইঞ্চি হবে। 
২. প্লাস্টারিং এর সময় অবশ্যই সারফেস ধুয়ে পরিষ্কার করতে হবে, কোন প্রকার ময়লা থাকা যাবে না। 
৩. আরসিসি সারফেস ভালোমতো চিপিং করতে হবে। 
৪. মিডিয়াম দানার বালি ব্যবহার করতে হবে। 
৫. পরিষ্কার পানি ব্যবহার করতে হবে ইত্যাদি। 

বাড়ির পি এল (প্লিন্থ লেভেল / ফ্লোর) নির্ণয় পদ্ধতি

১. নিকটবর্তী রাস্তার উচ্চতা। 
২. বন্যার সর্বোচ্চ লেবেল। 
৩. নিকটস্থ বাড়ির প্লিন্থ লেভেল।  
৪. মাটি লেবেল
৫. আগামী ৫০ বছরে আপনার বাড়ির নিকটস্থ রাস্তা কি পরিমান উঁচু হতে পারে। 
এইসব বিষয় মাথায় রেখে আপনার বাড়ির প্লিন্থ লেভেল উচ্চতা নির্ধারণ করতে পারেন যাতে ভবিষ্যতে ফ্লোর ভাঙতে না হয় । 

কংক্রিট মিশ্রণের কিছু আদর্শ অনুপাত নিচে দেওয়া হল:

১. ফাউন্ডেশন এবং ম্যাচ কংক্রিট  ১:৩:৬
২. নরমাল আরসিসি কংক্রিট ১:২:৪
৩. পানি প্রতিরোধী কংক্রিট ১:১.১৫:৩
৪. ডিপিসি (ডাম্প প্রুফ কোর্স) ১:১.৫:৩
৫. প্রিস্ট্রেস কংক্রিট ১:১:২
৬. গ্রাউন্ড ফ্লোর  কংক্রিট  ১:৩:৬
৭. পেটেণ্ট স্টোন কংক্রিট ১:২:৪
৮. মোজাইক ১:২:৪
৯. জেনারেল স্যানিটারি ওয়ার্কস ১:৩:৬
১০. সেপটিক ট্যাঁক ও সোককওয়েল ১:২:৪

কিউরিং এর কিছু আদর্শ নিয়ম:

১. ফাউন্ডেশন এবং ম্যাচ কংক্রিট = ২০ ঘণ্টা পর থেকে সাতদিন পর্যন্ত
২. নরমাল আরসিসি কংক্রিট = ২০ ঘণ্টা পর থেকে সাতদিন পর্যন্ত
৩. পানি প্রতিরোধী কংক্রিট  = ২০ ঘণ্টা পর থেকে সাতদিন পর্যন্ত
৪. ডিপিসি (ডাম্প প্রুফ কোর্স) = ২০ ঘণ্টা পর থেকে সাতদিন পর্যন্ত
৫. প্রিস্ট্রেস কংক্রিট  = ২০ ঘণ্টা পর থেকে সাতদিন পর্যন্ত
৬. গ্রাউন্ড ফ্লোর  কংক্রিট  = ২০ ঘণ্টা পর থেকে সাতদিন পর্যন্ত
৭. পেটেণ্ট স্টোন কংক্রিট  = ১৫ ঘণ্টা পর থেকে সাতদিন পর্যন্ত
৮. মোজাইক = ১২ ঘণ্টা পর থেকে সাতদিন পর্যন্ত
৯. জেনারেল স্যানিটারি ওয়ার্কস  = ২০ ঘণ্টা পর থেকে সাতদিন পর্যন্ত
১০. সেপটিক ট্যাঁক ও সোককওয়েল  = ২০ ঘণ্টা পর থেকে সাতদিন পর্যন্ত

👷ধন্যবাদ👷
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url